ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমানকে চেনেন না, তার নাম শোনেননি এমন মানুষ হয়তো এই মুহূর্তে খুব কমই আছেন বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশে কেন? সারা ক্রিকেট বিশ্বেই মুস্তাফিজ এখন এক তীব্র আকর্ষণের নাম, অজানা রহস্যের নাম, চোখ জুড়ানো প্রশান্তির নাম।
সেই মুস্তাফিজ কি এমন অপরাধ করে ফেলেছেন যে তাকে মাফ করে দিতে হবে? আসুন সেটাই বোঝার চেষ্টা করি।
সাতক্ষীরার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বছর খানেক আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আলোয় আসা একজন ক্রিকেটার মুস্তাফিজ। শুরু থেকেই এই মুস্তাফিজ ক্যামেরার সামনে খুব একটা স্বচ্ছন্দ্য নন। অথচ, সম্প্রতি দেশের প্রথম সারির একজন সাংবাদিক মুস্তাফিজের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সেখানে তিনি এমনভাবে তার সাথে কথা বলেছেন যেন মুস্তাফিজ তার স্কুলের ছাত্র, তিনি প্রধান শিক্ষিকা। ক্রমাগত ‘তুমি’ সম্বোধন ও অদ্ভুত সব প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে না পেরে মুস্তাফিজ শেষ-মেশ তাকে বলেছেন, ‘মাফ করেন!’
এর বাইরেও যেভাবে তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে। যদিও জাতিগতভাবেই হয়তো আমরা এমন বাড়াবাড়িতে অভ্যস্ত। মাথায় তুলতেও সময় নেই না, আবার মাথা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেও দেরি হয় না।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে একজন ক্রিকেটার দু’বার আইপিএল এর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়ছেন। সেই সাকিব আল হাসান একবার বলেছিলেন, ‘দেশের হয়ে একটা মাত্র ম্যাচ জিতলে যে পরিমান ভাল লাগা কাজ করে, আইপিএলের শিরোপা জিতলেও ততোটা খুশি লাগে না!’
একটা দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর একজন ক্রিকেটারের কাছে কতখানি গুরূত্ব বহন করে, সাকিবের ঐ উক্তিতেই তা দিবালোকের মত পরিষ্কার। অথচ আমাদের দেশের অনেক বড় বড় মানুষের মাথায় এই সহজ ব্যাপারটি ঢুকছে না। তারা আইপিএলজয়ী মুস্তাফিজকে জাতীয় বীর আখ্যা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করেন, আইপিএলফেরত মুস্তাফিজকে লাল গোলাপের মুকুট পরিয়ে বি্রাট কর্ম সাধন করে ফেলেন।
অথচ আইপিএলের মুস্তাফিজ অপেক্ষা বাংলাদেশ জাতীয় দলের মুস্তাফিজ হাজার গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ! এই সহজ ব্যাপারটাই কেন জানি অনেক বড় বড় মানুষের মাথায় ঢুকছে না।যে কারণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞাপনেও মুস্তাফিজের হায়দ্রাবাদের জার্সি পরিহিত ছবিটিই বেশি গুরূত্ব পায়!
সত্যি কথা বলতে কি, মুস্তাফিজ এখন হট কেক। সবাই তার পাশে দাঁড়িয়ে, একটা ছবি তুলে নিজেকে অনেক গুরূত্বপূর্ণ প্রমাণের চেষ্টায় ব্যস্ত আছেন। দুদিন পরে এই মুস্তাফিজই যখন একটু বাজে পারফরম্যান্স করবেন, তখনি এই মানুষগুলো তাদের আসল চেহারা নিয়ে হাজির হবেন। সেদিন মুস্তাফিজ আশে-পাশের অনেক মানুষেরই প্রকৃত চেহারা আবিষ্কার করে আঁতকে উঠবেন!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবের পর থেকে সারা বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটারকে বোকা বানাতে পারদর্শী এই মুস্তাফিজই মাশরাফিকে বল করতে গেলে নার্ভাস হয়ে যান, এখনো পর্যন্ত এটাই সত্য। উন্মাদনার বাড়াবাড়িতে এই সত্যটাকে দয়া করে কেউ বদলে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। মুস্তাফিজকে দয়া করে তার মতো থাকতে দিন। দয়া করে তাকে অহেতুক যন্ত্রণা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মুস্তাফিজ যেদিন বাংলাদেশের হয়ে বড় কোন অর্জন করবেন, কোন একদিন হয়তো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাবেন, সেদিন না হয় এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা পর্যন্ত কয়েকশ কিলোমিটার রাস্তা আমরা লাল গোলাপে ঢেকে ফেলবো। তার আগ পর্যন্ত দয়া করে ধৈর্য্য ধরুন, মুস্তাফিজকে ‘মাফ করেন’!