ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাজ্যের থাকা না-থাকা নিয়ে দেশটিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার যে গণভোট হতে চলেছে, তার ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। গণভোটের রায়ে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বৈদেশিক সাহায্য, আর্থিক লেনদেন ও পরিবহনসেবার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসবে।
ইইউ থেকে যুক্তরাজ্য বের হয়ে গেলে বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবের ব্যাপারে এসব সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা। তবে যুক্তরাজ্যে কারিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বের হওয়ার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এসব লোক মনে করেন, এটি হলে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি শিথিল হবে, বাংলাদেশের নাগরিকদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে।
‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিত যুক্তরাজ্যের গণভোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন বিশ্ব নেতারাও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইইউ থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা আজ দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন গত মাসে নাগোয়ায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় যুক্তরাজ্যের ইইউতে থাকার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সমর্থনের অনুরোধ জানান ডেভিড ক্যামেরন। ওই আলোচনার সময় শেখ হাসিনা সমন্বিত ও একীভূত বিশ্বের পক্ষে মত দেন। তাঁর মতে, যুক্তরাজ্যের নিজের স্বার্থেই ইইউতে থাকা উচিত।
যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য যদি ২৮ দেশের ইউরোপীয় জোট ইইউ থেকে বের হয়ে যায়, লিসবন চুক্তির আওতায় নতুন পর্যায়ে যেতে দুই বছর সময় লাগবে। এ সময়ে স্থিতাবস্থা থাকবে বলে বাজার-সুবিধার ক্ষেত্রে ইইউর আওতায় যে সুবিধা পায়, তা বাংলাদেশের জন্য বজায় থাকবে। দুই বছর পর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ইইউর ‘অস্ত্র ছাড়া সবকিছু বা ইবিএ কর্মসূচি’র আওতায় ইউরোপের দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত যে বাজার-সুবিধা পায়, তার জন্য নতুন করে দর-কষাকষি শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যে গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২২০ কোটি পাউন্ড।
জানতে চাইলে জেনেভায় বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার দুঃখজনক সিদ্ধান্তটি নিলে জোটের আওতায় নেওয়া সব ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যাবে। এতে করে শুধু বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশ নয়, সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়বে। এতে করে বৈদেশিক সাহায্য, মুদ্রাবিনিময়, পরিবহন সেবাসহ নানা ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। তাঁর মতে, যুক্তরাজ্য গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলেও বাজার-সুবিধা নষ্ট হবে না। তবে জোট থেকে বের হওয়ার কারণে ইউরোর পতন ঘটবে। এর ফলে যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা হারাবে। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ তৈরি করবে।