Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/hosting/public_html/demo/news1/wp-content/plugins/hupso-share-buttons-for-twitter-facebook-google/share-buttons-hupso.php on line 252

বুধবার, ০৮ জুন ২০১৬ ০৩:০৬ ঘণ্টা

বড়পুকুরিয়া খনিতে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উৎপাদন

Share Button

বড়পুকুরিয়া খনিতে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উৎপাদন

চলতি অর্থবছরে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার টন।

২০০৫ সালে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে কোন অর্থবছরেই যা সম্ভব হয়নি। চলতি অর্থবছরসহ বিগত তিন অর্থবছরে এ খনি থেকে উৎপাদন করা হয়েছে ২৬ লাখ ৩৯ হাজার টন কয়লা। যা খনি থেকে মোট উৎপাদিত কয়লার প্রায় ৪০ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে খনি মুনাফা করেছে প্রায় ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।

তাছাড়া বিগত পর পর তিন বছর খনিটি কোম্পানি পর্যায়ে দেশের সেরা ১০ আয়কর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে। পেট্রোবাংলার এ কোম্পানিটি গত বছর জ্বালানি খাতে সেরা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও নির্বাচিত হয়। খনিতে শ্রমিক অসন্তোষ না থাকায় এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ২০০৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর উৎপাদনে যায়। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১০ বছরে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টন কয়লা।

চলতি অর্থবছরসহ বিগত তিন অর্থবছরে এ খনি থেকে উৎপাদন করা হয়েছে ২৬ লাখ ৩৯ হাজার টন কয়লা। যা খনি থেকে মোট উৎপাদিত কয়লার প্রায় ৪০ শতাংশ। এরমধ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১০ লাখ ৩০ হাজার টন, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৬ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৩ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হয়।

২০০৯ সাল থেকে খনিটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। গত আট বছরে কয়লা বিক্রি করে এ খনি মুনাফা করেছে প্রায় ১ হাজার ৭২৯.৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিগত তিন বছরেই মুনাফা করেছে প্রায় ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে উৎপাদিত কয়লা বিক্রি করে প্রায় ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা আয় হয়েছে এবং সরকারি কোষাগারে ভ্যাট, ট্যাক্স ও রয়ালিটি বাবদ জমা পড়েছে প্রায় ৮২৭ কোটি টাকা।

দেশে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে কয়লার ভূমিকা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খনি থেকে উৎপাদিত হচ্ছে উন্নতমানের (বিটুমিনাস) কয়লা। এর তাপজনন ক্ষমতা অনেক বেশি। সালফারের পরিমান অতি নগন্য এবং বড়পুকুরিয়ার কয়লা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এ কয়লা শুধু পার্শ্ববর্তী ২৫০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদাই পূরণ করছে না। দেশের শিল্পকারখানা ও ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে এখানকার কয়লা।

সূত্রমতে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুজ্জামান ২০১৩ সালের মে মাসে দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রথমেই শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ খনি শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে খনি কর্তৃপক্ষ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি ও খনি শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা করতে সক্ষম হন। ফলে খনি শ্রমিকদের প্রোডাকশন বোনাস, বেতন বৃদ্ধি, সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে সিএমসি-এক্সএমসি সম্মত হয়।

শ্রমিকদের অন্যতম দাবি খনির অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণসহ সরকারিভাবে প্রতিমাসে প্রত্যেক শ্রমিককে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর এমডির এসব কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

খনিতে বর্তমানে শ্রমিক অসন্তোষ নেই বললেই চলে। শ্রমিক অসন্তোষ না থাকায় খনির কয়লা উৎপাদন বেড়ে যায়। খনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমি মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও ভূমিহীনদের সফলভাবে পূনর্বাসন করতে সক্ষম হওয়ায় এলাকাবাসীর আন্দোলনও থেমে গেছে।

তাছাড়া খনি কর্তৃপক্ষ আশপাশের এলাকায়  রাস্তাঘাট উন্নয়নসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণও খনি বান্ধব হিসেবে গড়ে উঠেছে।এদিকে, খনির বর্তমান অপারেশন এলাকাটি অত্যন্ত জটিল ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। কোন কারণে যদি বর্তমান অপারেশন এলাকা থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় সেজন্য আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে খনির সেন্ট্রালপার্টের উত্তর ও দক্ষিণ দিক সম্প্রসারণ করে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় গত বছরের ২১ মে। ইতোমধ্যে সম্ভাবতা যাচাইয়ের জন্য পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, খনির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দেশে জ্বালানি সংকট নিরসণের জন্য বড়পুকুরিয়া খনির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিপাড়া কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে। দীঘিপাড়া কয়লা ক্ষেত্র উন্নয়ন করা হলে এখান থেকে বছরে ৪ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যা দিয়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে। এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ ও জ্বালানি বিভাগের খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে গত বছরের ২১ অক্টোবর একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

এছাড়া, খালাসপীর, জামালগঞ্জ ও ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্রের ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে শুরু করে খনি উন্নয়ন এবং কয়লা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ তিনটি কয়লা ক্ষেত্র লিজ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আবেদন করে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলার এ কোম্পানিটি গত বছর জ্বালানি খাতে সেরা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত এবং পুরস্কৃত হয়। এছাড়া জাতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৫ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে  ১০-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়োজিত মেলায় বড়পুকুরিয়া খনির স্টল সেরা স্টল হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এদু’টি অনন্য সাফল্যের জন্য ১২ ডিসেম্বর মেলার সমাপনী দিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামানের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন। এর আগে গত ১৫-১৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ) কর্তৃক আয়োজিত মেলায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও বাপেক্স এর স্টল যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে এসব নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) এমডি আমিনুজ্জামান বুধবার (৮ জুন) দুপুরে বাংলানিউজকে জানান, খনির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায় এবং এলাকার জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতার ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬